আমরা সংগঠন করি কিন্তু কেন আমাদের সংগঠনগুলো কেন ভেঙ্গে যায় তা আমরা অনেকেই জানি না। সংগঠন ভেঙ্গে গেলে আমরা একে অপরের দোষ দিয়ে থাকি। আবার নিয়ম কানুন বা আইনের দোষও দিয়ে থাকি। তবে আজকে আমি জানাবো আমাদের সংগঠন কেন ভেঙ্গে গিয়েছে তার বাস্তব চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আপনারা অনেকেই আমার কথায় সাথে একমত হবেন বলে আশা করি।
আমাদের সংগঠনগুলো কেন ভেঙ্গে যায়?
আমাদের সমাজে অনেক সামাজিক সংগঠন , আর্থ-সামাজিক সংগঠন, যুব উন্নয়ন সংগঠন এরকম বিভিন্ন নামে সংগঠন গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে সংগঠন গুলো ভালভাবেই পথচলা শুরু করে এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা লাভ করে। সংগঠনের সময় ও সদস্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সংগঠনগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা তৈরি হতে থাকে। আজকে আমাদের সংগঠন গুলো ভেঙ্গে যাওয়ার কারন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আমার এই লেখা সম্পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে পরবেন।
একটি সংগঠনে যখন ৮/১০জন সদস্য হয় বা আর্থিক লেনদেন শুরু হয় তখন সংগঠন পরিচালনা করার জন্য একটি দক্ষ কমিটি করতে না পারা, সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা, অর্থ সংগ্রহ ,আর্থিক লেনদেন সঠিকভাবে পরিচালনা না করা, সংগঠনের সার্থে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা সংগঠনগুলো সদস্যদের ভিতর সংগঠনের ওপর বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে। যার কারনে আমাদের সংগঠন গুলো আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যায়।এবার চলুন আমাদের সংগঠন গুলো ভেঙ্গে যাওয়ার কারনগুলো নিয়ে মুল আলোচনায়….
কেন অধিকাংশ সংগঠন ভেঙ্গে যায়?
আমাদের সংগঠন গড়ার আগেই জেনে রাখা ভালো যে, কেন অধিকাংশ সংগঠন ভেঙ্গে যায়। যাহাতে সবাই আগাম সচেতন থাকতে পারেন। তাহলে শুনুন আমাদের সংগঠনগুলো ভাঙ্গার মুলত ১৪টি কারন ছিলো।তা আজকের আলোচনায় এই ১৪টি কারন সম্পর্কে জানতে পারবেন। আশাকরি অধিকাংশ কারনগুলো আপনাদের সাথে মিলে যাবে। সংগঠন ভেঙ্গে যাওয়ার কারনগুলো হলো যথাক্রমেঃ
- সংগঠন ভুলভাবে পরিচালনা করা
- কমিটি গঠন নিয়ে সদস্যর ভিতর দন্ধ
- কমিটির দায়িত্বহীনতা
- কমিটির স্বজনপ্রীতি মনোভাব
- কিছু সদস্যর একঘেয়েমি পনা
- সদস্যদের অব-মূল্যায়ন
- সংগঠনের সদস্য-কমিটির ভিতর বিভক্তি সৃষ্টি
- সিদ্ধান্তহীনতা
- অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাৎ
- অপরিকল্পিত আর্থিক লেনদেন
- পার্সোনাল অথবা ব্যবসায় কাজে অর্থ সম্পদ ব্যাবহার
- ব্যাংক একাউন্ট না খোলা
- সংগঠন আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলা
- আর্থিক হিসাবে অনিয়ম
প্রতিটা কারনের বিস্তারিত আলোচনা করে আরও সহজ করে দিলাম।
সংগঠন ভুলভাবে পরিচালনা করা
একটি সংগঠন গঠনের পর এটাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংগঠন পরিচালনা করার জন্য। রাষ্ট্রীয় কিছু নিয়ম কানুন আছে সেগুলো মেনে বা তার পাশাপাশি সংগঠনের সার্থে নিজেদের কিছু নিময় ও তৈরি করে সংগঠন পরিচালনা করতে হয়,পরিচালনা করার জন্য কোন নিয়ম কানুন না মানলে ভেঙ্গে পরতে পারে।
কমিটি গঠন নিয়ে সদস্যর ভিতর দন্ধ
সংগঠন গঠন করার পর, সংগঠনটি সুষ্ঠ ও সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য- সদস্যদের ভিতর থেকে কিছু সদস্য কে বাছাই করে। সকল সদস্যর মতামত বা ভোটের মাধ্যমে একটি নিরেপক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সংগঠন উন্নয়নে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে। কমিটি না করলে সংগঠন পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পরে। অনেক সময় কমিটি গঠন নিয়ে সদস্যর ভিতর দন্ধ সৃষ্টি হয়। যা কিনা সংগঠন ভাঙ্গার কারন হতে পারে। আবার কমিটির দায়িত্ব অবহেলার কারনেও সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাহত হয় যার করনে সংগঠন দুর্বল ও ভেঙ্গে যেতে পারে।
কমিটির দায়িত্বহীনতা:
কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে যেমন: সভাপতি, সেক্রেটারি,ক্যাশিয়ার,সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক। এই পদে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেও পদ পদবি ধরে বসে থাকে। অনেকে এই পদ দখল করে বসে থেকে নিজেকে অনেক কিছু মনে করে। তারা ভাবে তারাই সংগঠন এর সবকিছু কমিটির। বাকি সদস্যদের বা সাধারণ সদস্যদে কিছু মনেই করে না।তারা সংগঠনের স্বার্থ কে বাদ দিয়া নিজদের স্বার্থ কে প্রাধান্য দেয়।
তারা কিছু সদস্যকে সাথে নিয়া সংগঠনে স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে, নিজদের স্বার্থের জন্য জখন তখন মনগরা সিদ্ধান্ত নেয়। এদের এ অন্যায়কে বড় পদে বসে থাকা কিছু সদস্যরা আবার সাপোর্ট করে নিজের স্বার্থে জন্য। সংগঠন স্বার্থ বিরুদ্ধী কাজে কমিটির দায়িত্বহীনতার কারনেও সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যার করনে সংগঠন দুর্বল ও ভেঙ্গে যায়।
যদি কমিটির কেউ সংগঠনের স্বার্থে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে। তাহলে তার নিজ ইচ্ছায় কমিটি থেকে সরে গিয়ে, তার যায়গায় অন্যকে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
কমিটির স্বজনপ্রীতি মনোভাব:
আমাদের প্রতিটি সংগঠনে পরিচালক অথবা পরিচালনা কমিটির ফ্যামিলির, আত্মীয়-স্বজন বা তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজন সংগঠনের সাধারণ সদস্য পদে থাকেই। এদেরকে অন্য সাধারন সদস্য থেকে আলাদা চোখে দেখেন। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন এবং নিয়ম কানুন তাদের জন্য শিথিল করেন। এই স্বজনপ্রীতি মনোভাবের সংগঠন ভেঙ্গে যাওয়ার কারন হতে পারে।
কিছু সদস্যর একঘেয়েমি পনা:
কিছু সদস্য থাকে যারা সংগঠনের সকল সদস্যর মতামতের বাহিরে গিয়ে, একক সিদ্ধান্ত সংগঠনের উপর চাপিয়ে দিয়ে। নিজ স্বার্থ বা নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে- সংগঠনের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে। যা সংগঠনের সচেতন সদস্য কখনোই মেনে নিতে পারে না। তার এই একঘেয়েমি সিদ্ধান্তের কারনে সদস্যদের ভিতর বিবাধের সৃষ্টি করে।
সদস্যদের অব-মূল্যায়ন:
সদস্য হল একটি সংগঠনের মুল স্তম্ভ বা প্রধান খুঁটি। সদস্য ছারা কোন সংগঠন তৈরি হয় না। সংগঠনের সকল ছোট বড় সদস্যদের সঠিকভাবে মুল্যায়ন করতে হয়। আর যদি মুল্যায়ন না পায়। তাহলে ওই সদস্য একদিন সংগঠন ছেরে চলে যেতে পারে। এর প্রভাব অন্য সদস্যর পরে এতে সংগঠন ভেঙ্গে যেতে শুরু করে।
সংগঠনের সদস্য-কমিটির ভিতর বিভক্তি সৃষ্টি
একতা সংগঠনের একটি মুল শক্তি। সংগঠনের সার্থে সকল সদস্যদের মধ্যে একতা থাকতে হয়। কিন্তু কমিটির বা কোন সদস্য এমন অন্যায় কাজ করে। যা সংগঠন পরিচালক বা পরিচালনা কমিটি সেই অন্যায় কে সংগঠনের সার্থের বাহিরে গিয়ে। নিজেদের সার্থে সাপোর্ট করে এতে সদস্যর ভিতর বিভক্তি সৃষ্টি করে। এতে সংগঠন একতা ও সুনাম দুইটাই নষ্ট করে।
সিদ্ধান্তহীনতা:
সংগঠনের পরিচালক বা পরিচালক কমিটির সংগঠনের সার্থে সময়োপযোগী যথাযথ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। তাদের এই সিদ্ধান্তহীতার কারনে সংগঠন ক্ষতির মুখে পরে।
অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাৎ :
আমাদের সমাজে অনেক সামাজিক সংগঠন ও যুব উন্নয়ন সংগঠন রয়েছে। যারা সংগঠনের নামে সামাজিক বা উন্নয়ন মুলক কার্যক্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। এই সংগ্রহকৃত অর্থ সংগঠনে পুরো জমা না দিয়ে, নিজেদে কাজে ব্যাবহার করে বা আত্মসাৎ করে। আবার সংগঠনের নামে থাকা কোন জিনিস বিক্রি করে, বিক্রয়ের টাকাও আত্মসাৎ করে। এর কারনে সংগঠন আর্থিক সংকটে পরে, সদস্যদের ভিতর ঝগড়া সৃষ্টি হয়।
অপরিকল্পিত আর্থিক লেনদেন:
যেন কোন সংগঠন অপরিকল্পিত ভাবে সকল সদস্যর মতামত মুল্যায়ন ছারা। কিছু ব্যাক্তির সার্থে অথবা লোভে পরে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মিলে- সংগঠনের আর্থিক লেনদেন করা। এ রকম লেনদেনের কারনে সংগঠন আর্থিক ঝুঁকির মুখে পরে।
পার্সোনাল অথবা ব্যবসায় কাজে অর্থ সম্পদ ব্যাবহার:
সংগঠনের জমাকৃত অর্থ সম্পদ যাদের কাছে গচ্ছিত থাকে, তারা নিজেস্ব ব্যবসায় অথবা পার্সোনাল কাজে ব্যাবহার করে। এমনকি নিজেস্ব বা ঘনিষ্ঠ কিছু সদস্যকে দিয়ে থাকেন। এতে অন্য সদস্যরা জানলেও তাদেরকে যাতে কিছু বলতে না পারে। এ দরনের লেনদেন সংগঠন এর জন্য খুবই বিপদজনক। এতে যে কোন সময় সংগঠন ভেঙ্গে যায়।
ব্যাংক একাউন্ট না খোলা:
সংগঠন গঠন করার পর একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে সংগঠনের সংগ্রহ অর্থ ব্যাংকে রাখা। সংগঠনের নগদ অর্থের পরিমান বেশি হলে -একাধিক ব্যাংক একাউন্ট না খোলা। আমাদের অনেক সংগঠনগুলো ব্যাংক একাউন্ট না করে। নিজের কাছে বা নিজেস্ব ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা রাখে। যার কারনে সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়।
সংগঠন আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলা:
আমাদের সমাজের সংগঠন গুলোর পরিচালক বা পরিচালনা কমিটি সেচ্ছায় হোক/ অনিচ্ছায় হোক। সংগঠনের নিজেস্ব একাউন্টে টাকা লেনদেন না করে, পার্সোনাল একাউন্টে টাকা লেনদেন করে। সংগঠনের আর্থিক নিরাপত্তা ঝুকিতে ফেলে।
আর্থিক হিসাবে অনিয়ম:
অর্থ হল একটি সংগঠনের মুল চালিকাশক্তি। সংগঠনের আর্থিক হিসাবে অনিয়ম করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই। সংগঠনের হিসাবরক্ষক হতে হবে সৎ, ন্যায়পরায়ন, নিষ্ঠাবান ও হিসাব সংরক্ষণে পারদর্শী। যার কাছে কোন আপন পর, কোন প্রকার ভেদাভেদ থাকবে না। সংগঠনের সকল সদস্যকে সমান চোখে দেখবে।কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম করা, যথাসময়ে আর্থিক লেনদেনের হিসাব প্রকাশ না করা, লেনদেন অনিয়ম হলে- সদস্যদের কাছে তা গোপন রাখা। সঠিকভাবে হিসাব সম্পন্ন না করলে, সে সংগঠন অচিরেই ভেঙ্গে যায়।
উপসংহার:
আামাদের সংগঠন যেসব কারনে ভেঙ্গে যায়, সেসব বিষয় সচেতন থাকতে হবে এবং সকলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। সংগঠন ভাঙ্গার কারনগুলি যথাযত পর্যালোচনা করে এর প্রতিকার করতে হবে। তাহলে আমাদের সংগঠনগুলো সুন্দর ভাবে গড়ে উঠবে।
সংগঠনের সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
প্রশ্ন ১: সংগঠন সাধারণত কেন ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: সংগঠন বিভিন্ন কারনে ভেঙ্গে যেতে পারে এর নির্দিষ্ট কোন কারন নাই যেমন-একতা,অনিয়ম,অবিশ্বাস ইত্যাদি
প্রশ্ন ২:একতা না থাকলে কি সংগঠন ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: একতা একটি সংগঠনের মুল শক্তি একতা না থাকলে সামান্য সমস্যার কারনে ও সংগঠন ভেঙ্গে যায়।
প্রশ্ন ৩: সংগঠনের ব্যাংক একাউন্ট না করলে সংগঠন ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: সংগঠনে অর্থের পরিমান বেশি হলে সংগঠনের নামে বা সদস্যদের নিয়ে যৌথ একাউন্ট খুলে অর্থ সংগ্রহ করতে হয় বিশেষ প্রয়োজনে একাধিক একাউন্ট খোলা দরকার।
প্রশ্ন ৪: হিসাবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে সংগঠন ভেঙ্গে যায়?
উত্তর: সংগঠন এর আর্থিক হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে হিসবে এলোমেলো হয়ে যায় এতে সংগঠন আর্থিক ক্ষতির মুখে পরে।
আমাদের আরও আর্টিকেল পাড়ুনঃ
- বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট কোর্স
- এয়ার কম্প্রেসার মেশিনের দাম
- মহাসড়ক সংকেত কাকে বলে?
