ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম 2025

ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। কিভাবে, কোথায় এবং কোন পদ্ধতিতে ফি পরিশোধ করবেন, কী কী ডকুমেন্ট লাগবে – সব কিছু এক জায়গায়। BRTA অনুমোদিত নিয়ম অনুসরণ করে সহজেই লাইসেন্স ফি জমা দিন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম

বাংলাদেশে বৈধভাবে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স আবশ্যক। এটি শুধুমাত্র গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র নয়, বরং এটি আপনার দক্ষতারও একটি স্বীকৃতি। তবে, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয় এবং এই প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই জটিল মনে হতে পারে। তাই, আজ আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বিশদভাবে আলোচনা করব।

কেন ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়া জরুরি?

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA) কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। এটি সরকার নির্ধারিত বাধ্যতামূলক ফি, যা সরকার পরিচালিত বিভিন্ন পরিষেবা এবং ডাটাবেস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ফি প্রদান ছাড়া আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং লাইসেন্স অনুমোদিত হবে না।

অনেকেই ফি জমা না দিয়ে অবৈধ উপায়ে লাইসেন্স পেতে চান, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই, বৈধ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স পেতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরণ অনুযায়ী ফি

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে এবং প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য আলাদা ফি নির্ধারিত হয়েছে। নিচে বিভিন্ন ক্যাটাগরির লাইসেন্স এবং তাদের ফি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. লার্নার (শিক্ষানবীস) লাইসেন্স

এটি প্রাথমিক পর্যায়ের লাইসেন্স, যা একজন চালককে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় কিন্তু চূড়ান্ত লাইসেন্সের পূর্বে এটি ব্যবহার করা হয়।

  • ফি: ৩৫০ টাকা
  • মেয়াদ: ৩ মাস
  • পরিবর্তনীয় ফি: সময়সীমা পার হয়ে গেলে পুনরায় ফি জমা দিয়ে নবায়ন করতে হয়।

২. প্রাইভেট ড্রাইভিং লাইসেন্স

এই লাইসেন্সটি ব্যক্তিগত গাড়ি চালকদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ফি: ২০০০ – ৩০০০ টাকা
  • মেয়াদ: ৫ বছর
  • নবায়ন ফি: ২০০০ – ৩০০০ টাকা (মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন করতে হবে)

৩. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স

যারা পেশাদার ড্রাইভার হিসেবে বাস, ট্রাক বা অন্যান্য বাণিজ্যিক যানবাহন চালান, তাদের জন্য এই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।

  • ফি: ৩০০০ – ৫০০০ টাকা
  • মেয়াদ: ৩ বছর
  • নবায়ন ফি: ৩০০০ – ৫০০০ টাকা

৪. হেভি ভেহিকল (ট্রাক, বাস) লাইসেন্স

ভারী যানবাহন চালানোর জন্য আলাদা লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।

  • ফি: ৫০০০ – ৭০০০ টাকা
  • মেয়াদ: ৩ বছর

উল্লেখ্য: এই ফি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য BRTA অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা উচিত।

ফি জমার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র প্রস্তুত করতে হবে, যেমন:

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ
  2. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি প্রয়োজন হয়)
  3. মেডিকেল সার্টিফিকেট (বিশেষত পেশাদার লাইসেন্সের জন্য)
  4. পাসপোর্ট সাইজের ছবি (২-৩ কপি)
  5. আবেদন ফরম (BRTA থেকে সংগ্রহ করতে হবে)
  6. ফি জমাদানের রসিদ

কোথায় ফি জমা দিতে হয়?

BRTA নির্ধারিত ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে লাইসেন্স ফি জমা দেওয়া যায়। নিচে বিস্তারিত ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দেওয়া

  • BRTA-এর অনুমোদিত ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় যান।
  • নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করুন।
  • নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা জমা দিন।
  • জমার রসিদ সংগ্রহ করুন এবং সংরক্ষণ করুন।

২. মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ

বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে লাইসেন্স ফি জমা দেওয়া যায়। এটি সহজ এবং সময় বাঁচায়।

অনলাইনে ফি পরিশোধ করার নিয়ম

BRTA এখন অনলাইনে ফি জমার সুবিধা দিয়েছে।

  1. BRTA-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
  2. ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা অপশনে ক্লিক করুন।
  3. আবেদন নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করুন।
  4. বিকাশ, নগদ, অথবা অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করে পেমেন্ট করুন।
  5. সফল হলে পেমেন্ট রসিদ ডাউনলোড করুন এবং সংরক্ষণ করুন।

লাইসেন্স ফি জমার পর করণীয়

  • ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংকিং-এর রসিদ সংগ্রহ করুন।
  • BRTA অফিসে গিয়ে রসিদের কপি জমা দিন।
  • লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিন।

 

লাইসেন্স ফি জমার সময় যে ভুলগুলো এড়ানো উচিত

  1. ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠানো – ফি ফেরত পাওয়া কঠিন হতে পারে।
  2. পেমেন্টের রসিদ হারিয়ে ফেলা – এটি লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  3. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি জমা না দেওয়া – এতে আবেদন বাতিল হতে পারে।
  4. BRTA অফিসে যাচাই না করা – অনেক সময় অনলাইনে পেমেন্ট সফল হলেও সিস্টেমে আপডেট না হতে পারে।

আরও পড়ুন: নতুন ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ২০২৫

উপসংহার

ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম জানা থাকলে লাইসেন্স আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়। ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে আপনি সহজেই আপনার লাইসেন্স পেতে পারেন। আশা করি এই গাইডটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। আরও বিস্তারিত জানতে BRTA-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

আমি মোঃ মাসুম বিল্লাহ, একজন অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং Ajker Solutions-এর প্রতিষ্ঠাতা। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন কাজকর্ম অনলাইনে সম্পন্ন করার সহজ সমাধান নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। আমার লক্ষ্য হলো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে মানুষের জীবনকে সহজ করা। আপনি এখানে পাবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, চাকরির আবেদনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিস্তারিত নির্দেশনা। Ajker Solutions-এর মাধ্যমে আমি আপনাদের অনলাইনে কাজ করার যাত্রাকে সহজতর করতে চাই।

3 thoughts on “ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি জমা দেওয়ার নিয়ম 2025”

Leave a Comment